কাঙালিনীর বেদৌরা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
মো. জিয়াউদ্দিন শাহ, জেদ্দা (সৌদি আরব) থেকে
আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫: ২৮
তুমি কি কবি কাজী নজরুল ইসলামের বেদৌরা?
: কেন, কী হয়েছে? আমি শুধুই নজরুল ইসলামের হতে যাব কেন? আমি সারা বিশ্বের বিস্ময়।
: তুমি ঘুমের ঘরে আসো কেন। বাস্তবে আসতে পারো না? তোমার নাম আমার পছন্দ হয়েছে। বেদৌরা বিস্ময় কী করে, এখন আবার নিজেকে কাঙালিনীর বেদৌরা বলতে কী বোঝাতে চাইছ? তুমি জাতীয় কবির সৃষ্টি চরিত্র, কবি-রানি বা রাজকন্যার বেদৌরা নও কেন?
: আমি বাঁধনে জড়াই, কোনো নির্দিষ্ট বাঁধন আমাকে জড়িয়ে রাখে না। রাখতে পারে না। পৃথিবী এক রহস্যঘেরা বিস্ময়। আমি তার চেয়েও বিস্ময়কর। আমি পৃথিবীর সন্তান,কাঙালিনী পৃথিবীর মা। শ্রেণিবিন্যাস সে বন্ধু, বোন, স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা। তার বন্ধন আমাকে সর্বলোক ঘুরে বেড়াতে সাহায্য করে। যা-ই করি, দিনশেষে আমি কাঙালিনীর বেদৌরা। আমার সঙ্গে কবি-রানি বা রাজকন্যা যায় না, এরা যায় ডিজিটাল নামের সঙ্গে।
: ডিজিটাল নাম বলতে কী বোঝাতে চাইছ?
: ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, লিংকডইন, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, স্কাইপে, ভাইবার আরও কত-কী। ডিজিটাল কন্যারা সেখানেই থাকে।
: শুধু কন্যারা কেন, ছেলেরাও তো সেখানে থাকে। এগুলো যোগাযোগমাধ্যম। সবাই ব্যবহার করে, কেউ সেখানে থাকে না। এগুলো থাকার জায়গা নয়।
: তুই বলিস কী, কিছুই তো জানিস না! ভিউ, ভাইরাল, নোটিফিকেশন, কলিং, চ্যাটিং, লাইক ও কমেন্ট বলে ব্যাপার আছে। ছেলেমেয়েরা আজকাল সেখানেই বেশি মশগুল থাকে। এ মাধ্যম ঘুমের ঘরেও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছ। শুধু মানুষই পারে এগুলোয় মগ্ন থাকতে এবং অপারেট করতে। যারা আজও এর আওতায় আসেনি, অতি শিগগিরই মধ্যস্থিত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
: অচেনা আমাকে প্রথম দেখাতেই তুই বলছ, সৌজন্য এড়িয়ে যা খুশি তা-ই বলছ কেন? তুমি কাজী নজরুল ইসলামের যুগের লোক। তখনকার যুগে এ রকম সামাজিক মাধ্যম ছিল না। তুমি এগুলোর নাম জানলে কোথা থেকে?
: সবাইকে চিনতে ও সবকিছুই জানতে হবে কেন? যখন যা প্রয়োজন জেনে নিই, নিতে পারি। অচেনার সঙ্গেও দেখা করি, করতে পারি। তুই ঘুমিয়ে আছিস। আমি যা খুশি তা-ই বললে সমস্যা কী? আমার বলাতে ঘুমের মানুষের কী আসে যায়?
: ঘুমিয়ে আছি তাতে কী, কথা তো আমার সঙ্গেই বলছ, নাকি? কথা বলার সময়তো আর বুঝতে পারি না তুমি ঘুমের ঘরে এসেছ। সরাসরি আস না কেন? নাকি জেগে থাকা মানুষের সঙ্গে যা খুশি তাই বলা চলে না।
: আমি সবার সঙ্গেই কথা বলি। সবাই আমার সঙ্গে কথা বলে না। মতভেদের পার্থক্য আছে। আমি কারও কর্মের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কারও উদাহরণে অকর্মা। নিজেকে আমি বিস্ময় বলে দাবি করলেও কবি বলেছেন, আমি বেদৌরা। কাঙালিনী ছাড়া আমাকে কেউ নেয় না, নিতে চায় না।
: তাহলে এখানে এসেছ কেন? কাঙালিনির কাছে যাও…।
: কাঙালিনীর কাছেই থাকি। কাঙালের কাছেও মাঝেমধ্যে আসি। আসতে পছন্দ করি। ভাবলাম, তোর কাছেও একবার আসি। তুই কাঙালের মতোই, তাই এলাম। পরিচয় যেহেতু হয়েছে, মন চাইলেই চলে আসব ইনশা আল্লাহ।
: আমি কাঙালের মতো কী কারণে?
: তোর মনটা উদাস! প্রায়ই মনে হয়, সবকিছু থেকেও যেন তোর কিছুই নেই।
: আমার কী আছে কী নেই, তা নিয়ে তোমার মাথাব্যথা কেন?
: মাথাব্যথা সাধে না, ডিজিটাল যুগ ব্যথায় ফেলে। দৌরা থেকে বেদৌরা, বেদৌরা থেকে দৌরা। আমি এই চক্রের ভেতরেই থাকি। থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু ডিজিটাল চর্চা দৌরাকে বেদৌরা, দরদিকে বেদরদি, দ্বিতীয়কে অদ্বিতীয়, দিশাকে বিদিশা, দিতিকে অদিতি, মানুষকে অমানুষ ও প্রীতিকে অপ্রীতি বানাতে সাহায্য করে। সাহায্যের সঙ্গে ব্যাধিও ঢুকে পড়েছে। কিছু সুবিধাবাদী মানুষ ডিজিটালের সব সুবিধা ভোগ করেও একে খারাপ বলে। অথচ এক দিনও একে ছাড়া চলে না। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ভালো-খারাপের বড় মাধ্যম হলেও এতে মন্দের চর্চা বেশি হয়। ব্যাপারটা আমাকে আসলেই ভাবনায় ফেলেছে। দুঃখজনকও বটে।
: দৌরা থেকে বেদৌরা এখানে ডিজিটাল এল কোথা থেকে? এগুলো আবিষ্কারের আগেও তো মানুষ খারাপ করেছে, খারাপ হয়েছে, তাই না?
: ভালো-খারাপ ছিল, আছে ও থাকবে। ডিজিটাল চর্চায় খারাপ দ্রুত ছড়াচ্ছে। দৌরাদের যুগে মন্দ কাজের সুযোগ ছিল কম। এখন সুযোগ বেড়েছে। মানুষ মন্দের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই খুব খারাপের লক্ষণ। আরও কত-কী যে দেখতে হবে, আল্লাহ ভালো জানেন…।
: আল্লাহই ভালো জানুক। তোমার এত চিন্তার দরকার নেই। সমাজে খুনখারাবি ও রাহাজানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে! প্রতিদিন কেউ না কেউ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে! এতে তোমার মতামত কী?
: আমার মতামত দিয়ে কী করবি? তোর মধ্যেই মতামত আছে, খুঁজে বের করে নে।
: আমলে নেওনি কেন? আমি তো বলে দিয়েছি…।
: কী আমলে নিইনি, তুই কি বলে দিয়েছিস?
: রাজ্যের সভ্যতা বিনাশ পথে; এখানে এসেই তা শুরু হয়েছে। সভ্যহীনতার সব নমুনা চারদিকে অহরহ মিলছে।
: আমিও সময়ের পৃষ্ঠপোষকতা করতে বলতাম, জাগো মানুষ জাগো। মানুষ কইত, বেদৌরা আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ে কেন? তার কি কোনো কাম নেই, মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? কেউ কি জেগে থাকা মানুষকে জাগাতে আসে? এখন ঘুমের মানুষকেই জাগাতে আসি, জাগাতেও সহজ। বিবেক-বুদ্ধিহীন বলদ জেগে থাকলেও লাভ নেই। আমি বেদৌরা এখন পর্যন্ত জাগাতে পারিনি। পশুপাখিও মনিবের পায়রবি করে। এরা পশুসুলভেরও নিচে, বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী! এদের জন্যই পৃথিবীজুড়ে খুনখারাবি ও রাহাজানি বাড়ছে, সঙ্গে ধর্ষণও হচ্ছে।
: তোমার কবি ভালোবাসা ও মানবতার কথা বলে গেছেন। ভালোবাসার আন্তরিক চিত্তে নারীর জন্য লিখেছেন:
‘সাম্যের গান গাই—
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
আরও লিখেছেন,
‘…কোন কালে একা হয়নি ক জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়ী-লক্ষ্মী নারী।…’
চিত্তক্ষোভের আবিষ্কারে নারীকে বলেছেন,
এ-তুমি আজ সে-তুমি তো নহ;
আজ হেরি—তুমিও ছলনাময়ী,
তুমিও হইতে চাও মিথ্যা দিয়া জয়ী।
কিছু মোরে দিতে চাও, অন্য তরে রাখো কিছু বাকী,—
দুর্ভাগিনী! দেখে হেসে মরি! কারে তুমি দিতে চাও ফাঁকি?
প্রাণ নিয়া এ কি নিদারুণ খেলা খেলে এরা, হায়!
রক্ত-ঝরা রাঙা বুক দলে অলক্তক পরে আরা পায়!
…
নারী নাহি হতে চায় শুধু একা কারো,
এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায় এরা চায় তত আরো।
ইহাদের অতিলোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়,
যাচে বহুজন।…
যে পূজা পূজিনি আমি স্রষ্টা ভগবানে,
যারে দিনু সেই পূজা সে-ই আজি প্রতারণা হানে!
…
: কবির চিত্তক্ষোভের এই পঙ্ক্তিতে তোমার মন্তব্য কী?
: মন্তব্য খুবই সহজ। কবি ঠিকই বলেছে, বলাতে কোনো ত্রুটি নেই। আমার কবি ইউনিভার্সিটি থেকে উপাধি অর্জনকারী ছিল না, আত্মসচেতন ছিল। চেতনার কষাকষিতে যা কিছু না বললেই নয়, তাই বলেছে। মানবতার তরে চিরদিন নিজেকে দায়মুক্ত করার চেষ্টা করেছে, সার্থকও হয়েছে। কবির জীবনে নানাবিধ ব্যাঘাত এসেছে, শত অনাদর, অবহেলা, অপমান আর যন্ত্রণা সয়েও বারংবার প্রকৃতি প্রেমের সৌন্দর্যে মজেছে। নারীর পানে পূজা করেছে, ভালোবেসে মন দিয়েছে, তবু তার মন জয় করতে না পারার বেদনা মিলেছে, বিনিময়ে কভু পেয়েছে ছলনা। নিজ আত্মার গভীরতম বিচার বিশ্লেষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে যখন যা খুঁজে পেয়েছে তাই বলে গেছে। এ জন্যেই সে বেদৌরার স্রষ্টা হতে পেরেছে।
: জগৎজুড়ে নারকীয় কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। শিশুর সঙ্গেও হচ্ছে অবিচার। কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ প্রতিদিনই ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। এবার বলো, ধর্ষণ বন্ধ করার উপায় কী?
: কেমনে বন্ধ করবি, প্রতিফলন একেবারে মন্দ। মরণের ভয়, আল্লাহ-রাসুল, অলি-আউলিয়া ও পীর মুর্শিদের ভয় থাকলে তো বন্ধ করবি। জাহিল হলেও সৎ সঙ্গে পথ মেলে, দেখানো যায়। মৃত্যু, জেল-জরিমানা ও ফাঁসি সবই মানবে। এই নরপিশাচ তবুও ধর্ষণ ছাড়বে না! মানুষকে ঠকানোর পথ থেকে সরে দাঁড়াবে না। দ্বিনের কথাও কানে নেবে না। সঙ্গে কখনো মেলে রাজনৈতিক একরোখামি, গড়ে তোলে পক্ষপাত চর্চা। কাঠগড়ায় জমতে থাকে কুৎসিত মরীচিকা। তুই করবিডা কী?
: আমার কিছু করার নেই। এগুলো দেখে দুঃখ হয়, মনে ভীষণ লাগে। হলেই বা লাভ কী? তোমার কথাই ঠিক। মানুষের অপকর্ম ছিল, আছে ও থাকবে। আমি এতে কেন জানি চুপিচুপি কাঁদি। সাধের লাউয়ের পেছনের বৈরাগীর মতো সাধের মন আমাকে অনর্থকই কাঁদায়। কাঁদিয়ে প্রশ্নও তোলে, আমি কি মানুষের এমন দুর্গতি দেখতেই তোমাদের এখানে এসেছিলাম? হে দয়াময়! মানুষের মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তোলো। শান্তির ডাক বয়ে আনো, কল্যাণের বার্তা ছড়িয়ে দাও। আর ধ্বংস করো ওই নরপিশাচদের, যারা শুনতে পায় না শান্তির বাণী, শোনে না কল্যাণের ডাক। তোমার কবি নারীকে সব মহানের অর্ধেক দাবিদারস্বরূপ বলেছিল, ‘বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ সময় এসে গেছে, সময়ের দাবিতে পরিবর্তনও এসেছে। নারীকে এখন অর্ধেক দিয়ে দিতে হবে। বুক ফাটে মুখ ফোটে না। সবই ভুলে থাকতে চাই। ভুলতে গেলেও ঘটে যন্ত্রণা। আমাকে যোগ জিজ্ঞাসা করা ছাড়াই দুঃখগুলো বিজলির মতো জেগে ওঠে। অবাক যন্ত্রণা এসে বুকের ওপর চেপে বসে। মুখেও উল্টোপাল্টা কথা বের হয়ে আসে। কী আর করা, দুঃখ কখনো এমনই হয়। অকারণে দুঃখ খুঁজে নেওয়া মানুষগুলোকে চিরদিনই সহ্য করে যেতে হয়। তোমার মনে কিসের দুঃখ?
: আমার কিসের দুঃখ তুই জাইন্না কী করবি? মেজাজ খারাপ করিস না। কইলাম না, চাইলে বেদৌরা সকলের। না চাইলে কেহ না, কারওই না, শুধুই বিস্ময়। আমি কাঙালিনীকে যা খুশি তা-ই বলি, বলতে পারি। মন্দ যা-ই বলি, সে কোনো কিছুতেই রাগ করে না, কোনো দিন না। আমাকে ভালোবাসলেও মাঝেমধ্যে অপবাদ দেয়, খোঁজে মূল্যায়ন, চায় ভালোবাসার মূল্য। আমি তো মানুষ, ব্যথা নিতে না চাইলেও লাগে, হয়ে যায়। ব্যথা লাগলেই অনাকাঙ্ক্ষিত মেজাজের ভরে বাধ্য হয়ে বলি, আরে কাঙালিনী, দুর্ভাগিনী। শিল্পী এ জন্যই বলেছে, তুই যাকে ফুল বলিস আমি বলি একটি জীবন। আমার মতো করে একবার ভালোবেসে দেখস না, তবেই না তুই বুঝতে পারবি এর মূল্য কতটুকু নেয়, দেয় কিংবা কাঁদায়। সবশেষে কাঙালিনীকে চিরতরে ভুলে থাকতে চাই। ভুলে থাকতে পারলে ভালোই লাগে। কিন্তু ওই যে কইলি, আমাকে যোগ জিজ্ঞাসা ছাড়াই বিদ্যুৎ–গতিতে হঠাৎ মনে পড়ে। মনে পড়লেই ঘটে যন্ত্রণা। নিজেকে তখন আর বোঝাতে পারি না! বেদৌরার এলোমেলো মন কোনো বুঝই মানে না, মানতে চায় না। আমি জনম দুঃখী, কাঙালিনী দুঃখের প্রতিচ্ছবি। ছবির পটভূমিতে আছে মায়া, মায়া বজায় রাখে পিছুটান। যা অন্তরের অন্তস্তল থেকে ফেলা যায় না, মোছাও যায় না। হেরে গিয়েও তার তরে আশীর্বাদ ছাড়ি না, ছাড়তে পারি না। তারে কিছুতেই ভোলা গেল না, ভুলতে পারলাম না।
বি. দ্র.: বেদৌরা ঘুমে কিংবা কল্পনায় আমার ঘরে আসে। আমার নিঃসঙ্গতাক্ষণের কিছু সঙ্গী আছে, বেদৌরা অন্যতম একজন। তার স্বভাবচরিত্রের কিছু অংশের সঙ্গে আমারও কাকতালীয় কিছু মিল আছে। আমি সুযোগ পেলেই তাকে খ্যাপানোর চেষ্টা করি। বেদৌরা সহজে খ্যাপে না, হঠাৎ খেপে গেলে অনেক আজেবাজে ও আবোল-তাবোল বলে ফেলে। আমি কথাগুলো লিখতে পারি না। সামঞ্জস্য রেখে যতটুকু বলা যায়, সে চেষ্টাই করেছি।
2 Responses
Быстрый и качественный [url=https://remontnoutbukovacer.ru/]сервисный центр асер в москве[/url] по выгодным ценам в Москве и области. Лучшие специалисты в городе по ремонту ноутбуков
Быстромонтируемые здания – это прогрессивные здания, которые отличаются большой скоростью установки и гибкостью. Они представляют собой постройки, образующиеся из предварительно выделанных деталей или же блоков, которые могут быть быстро смонтированы в участке развития.
[url=https://bystrovozvodimye-zdanija.ru/]Быстровозводимые каркасные здания[/url] отличаются податливостью а также адаптируемостью, что разрешает просто изменять а также трансформировать их в соответствии с потребностями клиента. Это экономически результативное и экологически устойчивое решение, которое в последние лета получило широкое распространение.